অভিজিৎ ব্যানার্জি, ঢাকা: এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের তুলনায় প্রাপ্তির ক্ষেত্রে গত ৫৪ বছর ধরে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। সমস্যাগুলো সমাধানে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আরও আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। এমপিওভুক্ত একজন শিক্ষক-কর্মচারী ৬০ বছর বয়সে অবসর গ্রহণের পর তার কল্যাণ ও অবসর ফান্ডে নিজ বেতনের জমাকৃত টাকা পেতে ২ থেকে ৪ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
তাই অবসর-কল্যাণ ট্রাস্টের অতিরিক্ত ৪% কর্তনে মহামান্য হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন ও শিক্ষায় বৈষম্য নিরসন সময়ের দাবি প্রসঙ্গে আজ সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের দ্বিতীয় তলায় জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী লিয়াজোঁ ফোরাম (বঞ্চিত ও অবহেলিত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি আদায়ের জন্য সংগঠন সমূহের সমন্বয়ে গঠিত অরাজনৈতিক জোট)।
এই সংবাদ সম্মেলনে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের পক্ষ হতে বর্তমান সরকারের নিকট যে দাবিগুলো জানানো হয় তা হলো-
১) বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও শ্রান্তি বিনোদন ভাতার বিষয়টি অক্টোবর /২০২৫এর মধ্যে সমাধান করা হয় ৷
২) মাধ্যমিক শিক্ষায় বিএড ডিগ্রীর জন্য কোন স্কেল থাকতে পারবে না। সহকারি শিক্ষকদের প্রারম্ভিক বেতন-স্কেল ১০নং গ্রেডে উন্নীত করতে হবে। সহকারী প্রধান শিক্ষকদের ৭নং গ্রেডে বেতন ভাতা প্রদান করতে হবে। প্রধান শিক্ষকদের ৬নং গ্রেডে বেতন ভাতা প্রদান করতে হবে। বিশেষ করে এনটিআরসিএ-এর মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বদলি কার্যক্রম ৩০ অক্টোবর/২০২৫ এর মধ্যে কার্যকর করতে হবে। এমপিওভুক্ত সকল শিক্ষক-কর্মচারীদের সর্বজনীন বদলি আগামী ৩১ ডিসেম্বর/২০২৫খ্রি. এর মধ্যে চালু করতে হবে। মাধ্যমিক স্তরে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কারিগরি শিক্ষা কোর্স ১লা জানুয়ারি/২০২৬খ্রি. থেকে চালু করতে হবে।
৩) কলেজ (কারিগরি এবং মাদ্রাসা পর্যায়সহ) পর্যায়ে শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে প্রমোশনের আওতায় আনতে হবে। বিশেষকরে প্রভাষক থেকে সহকারি অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক পদ সৃষ্টি করতে হবে।
৪) মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে কামেল স্তরের অধ্যক্ষদেরকে মাস্টার্স কলেজের অধ্যক্ষের সমান আর্থিক সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে ।
৫) কারিগরি শিক্ষায় সিনিয়র পদমর্যাদা সম্পন্ন শিক্ষকদেরকে মাধ্যমিক স্তরে প্রধান ও সহপ্রধান হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
৬) সরকারকে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় সরকারি কোষাগারে জমা নিয়ে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয়করণ করতে হবে।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ছিদ্দিক উল্লাহ্ মিয়া, সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন জসিম উদ্দিন আহমেদ, মহাসচিব, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন, মতিউর রহমান দুলাল। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে অন্যান্য শিক্ষক নেতৃবৃন্দরাবক্তব্য রাখেন।
জসিম উদ্দিন আহমেদ লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, চাকুরি জীবন শেষে শিক্ষক কর্মচারীগণ বিভিন্ন ধরনের রোগ-বিমারে আক্রান্ত হন, ফলে তাদের চিকিৎসার জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে সে সময় বেসরকারি শিক্ষ-কর্মচারীদের জন্য পিআরএল প্রথা না থাকায় তার অবসর গ্রহণের পর মাসিক কোনো বেতন ভাতা পান না। ফলে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহে কঠিন আর্থিক সংকটে পড়তে হয়, এমনকি বিনা চিকিৎসায় তাদেরকে মৃত্যুবরণ করতে হয়। তাছাড়া অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মচারীদের মধ্যে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার পক্ষে কন্যাকে পাত্রস্থ করতে হিমসিম খেতে হয়। কল্যাণ-অবসর তহবিল সৃষ্টিকালীন সরকার কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ২% এবং অবসর সুবিধা বোর্ডের জন্য ৪% টাকা শিক্ষক-কর্মচারীদের মাসিক বেতন থেকে কর্তনের বিধান তৈরি করেন। অবসর গ্রহনের পর একজন শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ তহবিল থেকে সর্বশেষ বেতনের ২৫ মাসের সমপরিমাণ অর্থ ও জমানো টাকার ব্যাংক ইন্টারেস্ট পেয়ে থাকেন। অপরদিকে অবসর সুবিধা বোর্ড থেকে সর্বোশেষ বেতনের ৭৫ মাসের সমপরিমাণ অর্থ ও জমানো টাকার ব্যাংক ইন্টারেস্ট পেয়ে থাকেন। কিন্তু বিগত সরকার কল্যাণের জন্য অতিরিক্ত ২% এবং অবসরের জন্য অতিরিক্ত ২% টাকা প্রত্যেক শিক্ষক কর্মচারীর মাসিক বেতন থেকে কর্তনের ব্যবস্থা করলেও এক্ষেত্রে কোনো অতিরিক্ত সুবিধা শিক্ষক কর্মচারীদেরকে প্রদান করেননি। তবে অবসরের পর সরকার উক্ত ২টি ফান্ডের অতিরিক্ত ৪% কর্তনের কোন সুবিধা প্রদান না করায় বেসরকারী শিক্ষক কর্মচারী ফোরামের কয়েকজন শিক্ষক অতিরিক্ত ৪% কর্তনের সুবিধা প্রাপ্তির জন্য এবং অবসর গ্রহনের ৬ মাস পর অবসর কল্যাণের টাকা প্রাপ্তির জন্য মহামান্য হাইকোর্টে বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী লিয়াজো ফোরামের সম্মানিত প্রধান উপদেষ্টা ছিদ্দিক উল্লাহ্ মিয়া, এ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এবং আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট মামলা (মামলা নং-১৩১১৮/২০১৯) দায়ের করেন। উক্ত রিট মামলার রায়ে মহামান্য হাইকোর্ট এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের অবসর গ্রহণের পর তাদের নিকট থেকে কর্তনকৃত অতিরিক্ত ৪% এর সুবিধা প্রদানসহ অবসরের ৬ মাসের মধ্যে অবসর-কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করেন। মহামান্য হাইকোর্টের রায়টি এখনও কার্যকর না হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট দাবি জানানো হয়, যেন সরকার আগামী ৩০/১১/২০২৫খ্রি. তারিখের মধ্যে মহামান্য হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন করেন। যদি এমনটা না হয় তা হলে শিক্ষক-কর্মচারীগণ আগামী ৩০/১১/২০২৫খ্রি. তারিখের পরে তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে কঠোর আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে দাবি আদায়ে সচেষ্ট হবেন।